মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭

দেশের স্বার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে :রিজভী



ঢাকা,মঙ্গলবার,২৮ মার্চ ২০১৭ : রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে বা কোন দেশ-বিরোধী চুক্তি হলে তা হবে আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। এই ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে এ দেশের জনগণ কোনোদিন মেনে নেবে না।দেশের জনগন তা প্রতিরোধ করতে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন,প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে এমনও কথা শোনা যাচ্ছে যে, দুই দেশ সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধ্বংসী কোন গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একসঙ্গে তা মোকাবেলা করবে। এর অর্থ হচ্ছে-বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়া।যার ফলে ভারতের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সোচ্চার জনগোষ্ঠীকে দমন করা সহজ হয়। আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই-বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিদেশি সৈন্যকে বরদাস্ত করা হবে না।”আমাদের দেশে অভ্যন্তরে যেকোনো অশুভ শক্তি সেটি উগ্রবাদী-জঙ্গিবাদী যে গোষ্ঠীই হোক সেটি দমন করতে আমাদের সামরিক বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যথেষ্ট। আমাদের সামরিক বাহিনী এবং র‌্যাব-পুলিশ যদি জাতিসংঘ বাহিনীতে দক্ষতার সাথে কাজ করে সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে পারে তাহলে দেশের ভেতরের যেকোন জঙ্গিবাদী উৎপাত দমন করতে তারা নিশ্চয়ই সক্ষম। আমি প্রত্যয় দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই- এদেশের জনগণ অনঢ় দৃঢ়তা, নাছোড় মনোভাব, প্রবল সাহস ও বুকের মধ্যে চলকে ওঠা দেশপ্রেমের অদ্ভুত নিবিষ্টতা নিয়ে ভারতের সাথে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে রণ-দুন্দুভি বাজিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
রিজভী বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বানচাল করার জন্যই জঙ্গিবাদ তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। দানবীয় জঙ্গিবাদ দেশ থেকে দূর হোক তা বর্তমান সরকারই চায় না।বর্তমান সরকারকে নতজানু বলে দাবি করে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি না করার আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী।এ প্রসঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের দলের নেতারা প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে নানা কথা বলছেন। অথচ সে বিষয়টি আপনার মতো মন্ত্রীরা জানেন না, নাকি বেমালুম চেপে যাচ্ছে। এখানেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। তিনি বলেন. “আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে পরিস্কার বলতে চাই- আজকে দেশের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব সুরক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে কখনোই ছিনিমিনি খেলতে দেবে না জনগণ। জঙ্গিবাদ জাতীয় নির্বাচনের অন্তরায়’—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে জঙ্গি হামলার সুবিধাভোগী কারা। কারা জঙ্গিবাদ জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। এখন জনগণের কাছে পরিষ্কার, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি বানচাল করার জন্যই জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।তাঁর দাবি, জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে সরকার পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদের সামগ্রিক তৎপরতা আড়াল করছে। জনগণের কাছে আজ পরিষ্কার, জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে সরকার ফায়দা লুটছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি ভারত নির্ভরশীল হয়, ভারতের উপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী যদি প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকবে না।’তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে কী না-তা নিয়ে দেশের মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এর সাথে দেশের নিরাপত্তা স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব জড়িত। এই চুক্তির বিষয়ে আজ দেশের মানুষ চরমভাবে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় ভুগছে।’কোনো ধরনের গোপন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না জানিয়ে বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে ভারতের প্রধান চাহিদা প্রতিরক্ষা চুক্তি। এ ছাড়াও আরও দুই ডজন চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। তাই জনগণকে অবহিত না করে কোনো গোপন চুক্তি কেউ মেনে নেবে না, বাস্তবায়নও হতে দেবে না। দাসত্বের শৃঙ্খলে বাধার যেকোনো চুক্তি জনগণ, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন অগ্নিবর্ণ সংগ্রামে তা প্রতিহত করবে। ‘সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে জনাব রিজভী ‘রহস্যজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ‘র’ সব সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে এসেছে। ভারতের একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন,বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর এর ভূমিকা ছিল।
http://onlinesangbad.com


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন