মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭

হাসিনার অধীনে,বিএনপি নির্বাচনে যাবে না: গয়েশ্বর


ঢাকা,রবিবার ২৮ মার্চ ২০১৭: সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকেই ক্ষমতায় বসাবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কখনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার গোপন পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের আজ্ঞাবহ অযোগ্য, বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের অধীনে তথা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয় ।এদিকে আজ রবিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে ৫ বছর আগে অংশ নিলাম না কেন ? কারন শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানেই আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার ৫ জানুয়ারির ভূয়া নির্বাচনকে মেনে নেয়া। আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করেছে।তিনি বলেন, বিএনপি কখনই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। কোনো আপস নয়, প্রয়োজনে হলে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, সংগ্রাম করবে। তিনি বলেন,পরবর্তী নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলের যে আশঙ্কা রয়েছে, সেটি বিএনপি আমলে নিচ্ছে না।বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের কথা বলে জুযুর ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই।নির্বাচনকালীন কেবল নিরপেক্ষ সরকার হলেই কেবল বিএনপি অংশ নেবে। তিনি বলেন,আওয়ামী লীগের রাজনীতি জনগণের মন থেকে বিলিন হয়ে গেছে। তাই তারা আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পথ তৈরি করছে।আওয়ামী লীগ সরকার আজ মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে,সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করে রেখেছে,গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে রেখেছে।সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। মানুষের বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা আজ সুদূর পরাহত। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখলে অলিত গলিতে, চিপায় চাপায় গিয়ে মানুষ প্রতিশোধ নেবে। আর এসবের জন্য দায়ী হবে সরকার ও রাষ্ট্র। সুতরাং গণতন্ত্রের বিকল্প হলো গণতান্ত্রীক পথকে সম্প্রসারিত করে মানুষের মৌলিক অধিকারসমুকে উন্মুক্ত করে দেয়া। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজ দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নেই। আছে আওয়ামী লীগের রাজনীতির চেতনা। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে প্রতারণা করছে। তারা আবারো অগণতান্ত্রিকভাবে কুক্ষিগত করে দীর্ঘ দিন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঘরে বসে গণতন্ত্রের কথা বলে আর টেলিভিশনে চেহারা দেখিয়ে আন্দোলন হয়না, আন্দোলন করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। স্বৈরাচারের মোকাবিলার জবাব রাজপথেই দিতে হবে। তাই আসুন আমরা সবাই গণতন্ত্রের জন্য আরো একবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে লড়াই করি।ভূয়া মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যে খালেদা জিয়ার সাজা দেয়া এতই সহজ।বললেই জিয়ার সাজা হয়ে যাবে ? আজকে যাদের ফাঁসি হওয়ার কথা তারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে। সেলুকাস ! আমাদের নেত্রী,দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিবে। এতই সহজ মগের মূল্লুখ । আমরা কি মরে গেছি, বিএনপি কি মরে গেছে ?দেশের কোটি কোটি জনগন কি মরে গেছে ? নিশ্চই নয়। এ ব্যাপারে কোনো ফর্মূলা দিয়ে কোন প্রকার কাজ হবেনা। এখন পুরো দেশটাই কারাগারে পরিনত হয়েছে।সুতরাং নতুন কারাগারের আর প্রয়োজন কি?। আমরা আমাদের শত-সহস্র সহকর্মীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করে নির্বাচনে যেতে পারিনা। তিনি বলেন, রাজপথেই নামতে হবে। সেইপথে গণতন্ত্রকামী জনগণের লাইন দীর্ঘ হবে। আর দীর্ঘ লাইনের ধাক্কায় সরকার পড়ে যাবে।  আসন্ন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক উল্লেখিত আলোচনাসভার আয়োজন করে বীর উত্তশ শহীদ জিয় শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমিন প্রমুখ।

দেশের স্বার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে :রিজভী



ঢাকা,মঙ্গলবার,২৮ মার্চ ২০১৭ : রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে বা কোন দেশ-বিরোধী চুক্তি হলে তা হবে আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী। এই ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে এ দেশের জনগণ কোনোদিন মেনে নেবে না।দেশের জনগন তা প্রতিরোধ করতে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন,প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে এমনও কথা শোনা যাচ্ছে যে, দুই দেশ সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধ্বংসী কোন গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একসঙ্গে তা মোকাবেলা করবে। এর অর্থ হচ্ছে-বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়া।যার ফলে ভারতের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সোচ্চার জনগোষ্ঠীকে দমন করা সহজ হয়। আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই-বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিদেশি সৈন্যকে বরদাস্ত করা হবে না।”আমাদের দেশে অভ্যন্তরে যেকোনো অশুভ শক্তি সেটি উগ্রবাদী-জঙ্গিবাদী যে গোষ্ঠীই হোক সেটি দমন করতে আমাদের সামরিক বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যথেষ্ট। আমাদের সামরিক বাহিনী এবং র‌্যাব-পুলিশ যদি জাতিসংঘ বাহিনীতে দক্ষতার সাথে কাজ করে সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে পারে তাহলে দেশের ভেতরের যেকোন জঙ্গিবাদী উৎপাত দমন করতে তারা নিশ্চয়ই সক্ষম। আমি প্রত্যয় দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই- এদেশের জনগণ অনঢ় দৃঢ়তা, নাছোড় মনোভাব, প্রবল সাহস ও বুকের মধ্যে চলকে ওঠা দেশপ্রেমের অদ্ভুত নিবিষ্টতা নিয়ে ভারতের সাথে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে রণ-দুন্দুভি বাজিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
রিজভী বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বানচাল করার জন্যই জঙ্গিবাদ তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। দানবীয় জঙ্গিবাদ দেশ থেকে দূর হোক তা বর্তমান সরকারই চায় না।বর্তমান সরকারকে নতজানু বলে দাবি করে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি না করার আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী।এ প্রসঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের দলের নেতারা প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে নানা কথা বলছেন। অথচ সে বিষয়টি আপনার মতো মন্ত্রীরা জানেন না, নাকি বেমালুম চেপে যাচ্ছে। এখানেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। তিনি বলেন. “আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে পরিস্কার বলতে চাই- আজকে দেশের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব সুরক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে কখনোই ছিনিমিনি খেলতে দেবে না জনগণ। জঙ্গিবাদ জাতীয় নির্বাচনের অন্তরায়’—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে জঙ্গি হামলার সুবিধাভোগী কারা। কারা জঙ্গিবাদ জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে। এখন জনগণের কাছে পরিষ্কার, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি বানচাল করার জন্যই জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।তাঁর দাবি, জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে সরকার পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদের সামগ্রিক তৎপরতা আড়াল করছে। জনগণের কাছে আজ পরিষ্কার, জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে সরকার ফায়দা লুটছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি ভারত নির্ভরশীল হয়, ভারতের উপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী যদি প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকবে না।’তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে কী না-তা নিয়ে দেশের মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এর সাথে দেশের নিরাপত্তা স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব জড়িত। এই চুক্তির বিষয়ে আজ দেশের মানুষ চরমভাবে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় ভুগছে।’কোনো ধরনের গোপন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না জানিয়ে বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে ভারতের প্রধান চাহিদা প্রতিরক্ষা চুক্তি। এ ছাড়াও আরও দুই ডজন চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। তাই জনগণকে অবহিত না করে কোনো গোপন চুক্তি কেউ মেনে নেবে না, বাস্তবায়নও হতে দেবে না। দাসত্বের শৃঙ্খলে বাধার যেকোনো চুক্তি জনগণ, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন অগ্নিবর্ণ সংগ্রামে তা প্রতিহত করবে। ‘সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যকে জনাব রিজভী ‘রহস্যজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে ‘র’ সব সময় নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে এসেছে। ভারতের একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন,বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর এর ভূমিকা ছিল।
http://onlinesangbad.com


বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭

Sandra Lyng - Play My Drum (Dandy Lion Remix)

মাহফুজ আনাম কন্যা ”তাহমিমা আনামের” লেখা থেকে...........

ঢাকা,রবিবার,  মার্চ, ২০১৭ :  গত বছর মার্চ ২০১৬ প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কন্যা, তাহমিমা আনামের লেখা এই নিবন্ধটি ফেসবুক, নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনসংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল। আজ সেই নিবন্ধটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। নিবন্ধটি পড়ুন শেয়ার করুন।
তাহমিমা আনাম : বেশ কয়েকটি ভিডিও ছবিতে চোখ ভুলিয়েছি আমি।প্রথমটির শিরোনাম স্বীকারোক্তি সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি পত্রিকার সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বেশ লম্বা চওড়া বক্তৃতা দিচ্ছেন একজন টক-শো উপস্থাপক।আরও নীচে রয়েছে একটি ছবি। সেখানে আমি দেখলাম, এই লোকটির কুশপুত্তলিকা দাহ করছে একদল মানুষ।আরেকটি ছবি ছিল এমন।ফটোশপকৃত ছবিটিতে লোকটির মাথার সঙ্গে শিং লাগানো হয়েছে।এরপর আছে সংবাদ।তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা কেবল বাড়ছে৩০, ৪০, ৭০।সর্বশেষ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একটি বিবৃতি: এই সম্পাদকের উচিৎ পদত্যাগ করা বিচারের মুখোমুখি হওয়া।এই সম্পাদক হলেন আমার পিতা, মাহফুজ আনাম।আর পত্রিকাটি হলো দ্য ডেইলি স্টার, ইংরেজি ভাষার যে পত্রিকাটি তিনি ২৫ বছর আগে সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমার বাবা একসময় কৌতুক করে বলতেন, তার একটি ইচ্ছা ছিল, আইসক্রিমের দোকান দেয়া।কিন্তু তার বদলে ৪১ বছর বয়সে তিনি জাতিসংঘের ক্যারিয়ার ছেড়ে এলেন একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠার জন্য। আমার বয়স তখন ১৫।ওই সময় আমরা থাইল্যান্ডে থাকতাম।শিগগিরই, বাক্সপেটরা গুছিয়ে আমরা ফিরে গেলাম আমাদের আদি শহর ঢাকায়।১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে পত্রিকাটির জন্ম। সবে তখন প্রেসিডেন্ট এইচ. এম. এরশাদের সামরিক একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটেছে। গণতন্ত্রের সূচনালগ্নে আমার পিতা বাংলাদেশে ফিরতে পেরেছিলেন। যে দেশটিকে তিনি ২০ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন করতে সাহায্য করেছিলেন, সে দেশের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করতে তিনি ফিরেছিলেন। পত্রিকার সম্পাদকের কার্যভার গ্রহণের মাসকয়েকের মধ্যেই, বিরোধী দলের প্রতি সমঝোতার হাত বাড়াতে দ্বিদলীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় আমার বাবা প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করলেন।  এরপর, পার্লামেন্ট বয়কট করা প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে হরতালের আশ্রয় নেওয়ায় তিনি বিরোধী দলেরও নিন্দা জানালেন। গভীরভাবে বিভাজিত তখনকার রাজনৈতিক পরিবেশে, তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার একটি চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। বৃহত্তর মঙ্গলের পক্ষে থাকতে ব্যর্থ হলেই, তিনি উভয় দলের কড়া সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন। দেশের সর্বাধিক পঠিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা হয়ে উঠে দ্য ডেইলি স্টার। সঙ্গে আছে বাংলা ভাষার একটি সহ-প্রকাশনাপ্রথম আলো। একসঙ্গে, দুটি পত্রিকা দেশের স্বাধীন প্রিন্ট মিডিয়ার একটি বড় শক্তি।একনায়কতন্ত্রের অবসানের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যম তুলনামূলক যে স্বাধীনতা ভোগ করে, তার সত্যায়ন দুটি পত্রিকা।

এটি গর্ব করার মতো একটি বিষয় অঞ্চলে, যেখানে সাংবাদিকরা নিয়মিতই কারাবরণ করেন, গুম হয়ে যান। কিন্তু এরপরও,আমার বাবা রাষ্ট্রের শক্তিশালী কাঠামো থেকে মুক্ত নন।সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, পুলিশসব প্রতিষ্ঠান, যাদের কাছ থেকে তিনি স্বচ্ছতা দাবি করে আসছেন, তাদের কাছ থেকেই চাপের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।তবে বিষয়গুলো ২০০৭ সালের চেয়ে কখনই এত বড় পরিসরে ছিল না।তখন জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে গিয়ে সেনাসমর্থিত একটি তত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতা দখল করে ছিল। সময়কালে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ট্রান্সক্রিপ্ট, অডিওটেপ ভিডিও আকারে গণমাধ্যমে খবর পাঠাতো।সেখানে অনেক মানুষকে সরকারী কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।এ কর্মকর্তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছেন।এ প্রতিবেদনগুলো স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।  কিন্তু এরপরও অন্যসব গণমাধ্যমের মতো ডেইলি স্টারও সেসব সংবাদ প্রকাশ করেছিল। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে, হাসিনাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে প্রায় ১১ মাস আটক রাখা হয়।যখন সামরিক শাসনের অবসান ঘটে, যেসব স্বাক্ষীরা হাসিনাকে অভিযুক্ত করেছিলেন, তারা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তারা দাবি করেন, তাদের কাছ থেকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল। বিষয়গুলো ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছিল।এমনকি, নির্দিষ্ট সময় পরে, অর্থাৎ ৩রা ফেব্রুয়ারি, যুক্তি-উপাত্ত দিয়ে যাচাই ব্যতিরেকে ওই সংবাদ প্রকাশের সিদ্ধান্তের জন্য দু:খপ্রকাশ করেন আমার বাবা। ডেইলি স্টারের ২৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি একটি টক-শো অনুষ্ঠানে গিয়ে এসব বলেন।পরেরদিন সকালে, আকাশ-বাতাসে কেবল ভেসে বেড়াচ্ছে তারস্বীকারোক্তি  প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ আমার পিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে গ্রেপ্তারের দাবি জানালেন। তার অভিযোগ, শেখ হাসিনার বন্দিত্বের জন্য আমার পিতাই দায়ী।এরপর থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে আমার পিতার বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ফৌজদারি মানহানি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের হলো। ডেইলি স্টার প্রথম আলোকে রাষ্ট্র কর্তৃক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার এটি সর্বশেষ একটি অধ্যায় মাত্র।
২০১৫ সালের মার্চে,নিষিদ্ধ ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুত তাহরিরের নিয়োগসংক্রান্ত একটি পোস্টারের ছবি প্রকাশ করে ডেইলি স্টার। ছবির ক্যাপশন ছিল: ‘কুৎসিত মস্তক উঁচু করছে সন্ত্রাসবাদ হাসিনা পার্লামেন্টে বললেন, এই ছবি প্রকাশ করে পত্রিকাটিমৌলবাদীদের প্রচারে সাহায্য করেছে।তিনি আরও বলেন, ছবি যারা প্রকাশ করেছে, রাষ্ট্র তাদেরবিরুদ্ধে ব্যবস্থানেবে।  আগস্টে টেলিকম খাত থেকে হঠাত করে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, নির্দেশ দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এখন আবার এসব।সন্দেহ নেই, যাচাই-বাছাই করার অযোগ্য প্রতিবেদন কারান্তরীন ব্যক্তিদেরস্বীকারোক্তি ভিত্তিতে প্রকাশ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ, যদিও চর্চা বাংলাদেশে খুবই সাধারণ। এটি হতে পারতো দেশের সাংবাদিকতা চর্চা পর্যালোচনা করার দারুণ একটি সুযোগ। তার পরিবর্তে, সুযোগের অপব্যবহার করে রাষ্ট্র মুক্তমত চেপে ধরার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করেছে।যখন ধরণের কিছু এমন কারও সঙ্গে ঘটে, যাকে আপনি ভালোবাসেন, তখন তার নিরাপত্তা ব্যতিত অন্য কিছুর ওপর মনোনিবেশ করা কঠিন। তারপরও, আমার পিতার ওপর যে হয়রানি চলছে, তা কেবল এক ব্যক্তির ওপর সরকারের ক্রোধের বিষয় নয়; বরং এটি হলো বাংলাদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ সমালোচনার জায়গা সঙ্কুচিত করার একটি বিষয়।  হাসিনা এবার নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন যে, তিনিও তার গ্রেপ্তারের পেছনে আমার পিতার হাত থাকার গুজব বিশ্বাস করেন।যে গোয়েন্দা টাস্কফোর্স ওই স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল, বা যে বিচারিক প্রক্রিয়ায় হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, অথবা যে কর্মকর্তারা তার গ্রেপ্তারের পেছনে দায়ী ছিল, তাদের বিষয়ে তদন্ত না করে, সরকার রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটি সংবাদপত্রের ওপর। ওইদিন আমি লন্ডনে থাকা অবস্থায়, আমার বাবা আমাকে একটি টেক্সট মেসেজ পাঠান।তিনি লিখেছেন, ‘১৭০০ কোটি ডলারের মামলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। দেশের মোট বাজেটের চেয়েও এটি বেশি। শব্দগুলোর পেছনে তার হাসির শব্দ আমি শুনতে পাই।আমি হাসির পেছনের দুঃখটাও বুঝতে পারি।আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমি এখন যেমন বোধ করছি, এমনটা কি তিনিও বোধ করেছিলেন ১৯৫৮ সালে, যখন তার পিতাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী হওয়ার দায়ে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক একনায়কতান্ত্রিক সরকার গ্রেপ্তার করেছিল। আমার দাদা কারাগারে চার বছর কাটিয়েছিলেন।যখন তার স্বাস্থ্যের এতটাই অবনতি হয় যে কর্তৃপক্ষ ভয় পেয়ে যায় কারাগারেই হয়তো তিনি মারা যাবেন, তখনই কেবল তাকে মুক্তি দেয়া হয়।এক বছর আগে, ব্লগার মুক্তমতের পক্ষের অ্যাক্টিভিস্ট অভিজিৎ রায়কে একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে হত্যা করা হয়।তখন আমরা ওই সহিংস চরমপন্থীদের ভয় পেতে থাকি, যারা রাস্তায় আমাদের লেখকদের হত্যা করছিল।এখন, খোদ রাষ্ট্রকেই ভয় হয়, যে রাষ্ট্র রাজনৈতিক ভিন্নমতালম্বীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করছে।এক অহেতুক আতঙ্কগ্রস্থ (প্যারানয়েড) সরকার সহিংস চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকির মাঝে পড়ে শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগী হলো মুক্ত গণমাধ্যম। আমি এখন ওই আইসক্রিম দোকানটার স্বপ্ন দেখি, দেখি তার মিষ্টি কোমলতাকে।স্বপ্ন দেখি অন্য এক জীবন, যেটি হয়তো আমাদের হতো।অবশ্যই, স্বপ্ন কখনই বাস্তব হয়ে উঠার নয়।রক্তে মিশে আছে ভিন্নমত।এবং গল্পটার মর্মার্থ এখন অবশ্যই বুঝতে হবে।আমার পিতার সবচেয়ে খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা করি আমি।তবে, তার জন্য সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে, ব্যক্তিগতভাবে।তার যন্ত্রণার জন্য তার প্রিয় দেশ আরেকটু দীন হয়ে উঠবে।
 উল্লেখ্য তাহমিমা আনাম একজন লেখিকা নৃবিজ্ঞানী।তাহমিমা আনাম ১৯৭৫ সালে ঢাকায় জন্ম গ্রহন করেন। পিতা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। মাতা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি অর্জন করেছেন। তিনিঅ্যা গোল্ডেন এইজ’(A Golden Age) এবং দ্য গুড মুসলিম (The Good Muslim)নামে ২টি উপন্যাস লিখেছেন। A Golden Age The Good Muslim বই ২টির জন্য তিনি সেরা প্রথম কমনওয়েলথ রাইটার্স প্রাইজ বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি একজন সেরা লেখিকা হিসেবে সানডে টাইমস ইএফজি ছোট গল্প পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।এছাড়াও তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন মতামত কলাম লেখিকা তাহমিমা আনাম ২০১৩ সালে তিনি বৃটেনের অন্যতম সেরা নবীন ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পান।উপরের লেখাটি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ। সূত্রঃনিউইয়র্ক টাইমস, ফেসবুকে প্রকাশিত